হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার স্রষ্টা ডাঃ হ্যানিম্যান তার অরগ্যান অফ মেডিসিনে বলেছেন চিকিৎসকের শ্রেষ্ঠ ও একমাত্র উদ্দেশ্য হল রোগীর সুস্বাস্থের প্রতিষ্ঠা করা এবং আরোগ্য দান করা অর্থাৎ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার প্রধান উদ্দেশ্য তিনটি—
ক) রোগীকে তা নির্ধারণ
খ) তাকে সুস্বাস্থ্যে প্রতিষ্ঠা করা এবং
গ) সম্পূর্ণরূপে তার আরোগ্য বিধান করা।
আর এই করতে গিয়ে যে নীতির কথা ডাঃ হ্যানিম্যান অনুসরণ করতে বলেছেন তা হল ‘সমঃ সমং সময়তি’। তবে এছাড়াও যে নীতি অনুসরণ করলে আমরা রোগীকে অনায়াসে সারিয়ে তুলতে পারি সেগুলি হল-
১) রোগ আরোগ্য নীতি (Law of Cure)
২) ড্রাগ প্রুভিং (Proving of drugs)
৩) ভাইটাল ডাইনামিস (Vital dynamis)
৪) অ্যাকিউট ও ক্রনিক ডিজিজ (Acute and Chronic disease)
৫) সিলেকশন অব মিনিমাম (Selection of minimm)
৬) পোটেনটাইজেশান অব ড্রাগস (Potentisation of drugs)
৭) মায়াজাম-সোরা, সিফিলিস ও সাইকোসিস (Miasms – Psora, Syphilis and Sycosis)
আর যারা এই সমস্ত নীতি অনুসরণ করে চিকিৎসা করেন তাদের বলা হয় বিশুদ্ধ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক মানে ক্লাসিকাল হোমিও, আর তাঁদের ওষুধ ব্যবহার পদ্ধতির নাম বিশুদ্ধ হোমিওপ্যাথি। কিন্তু হ্যানিম্যানের পরবর্তীকালের হোমিওপ্যাথির ইতিহাস যদি বিশ্লেষণ করে দেখি তাহলে দেখতে পাব তাঁর উত্তরসুরীরা বিভিন্নভাবে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করে গেছেন এবং হোমিওপ্যাথির উন্নতি বিধান করেছেন। তাই আমরা যদি হ্যানিম্যানের পরবর্তীকালের উত্তর-সুরীদের পদ্ধতি অনুসারে চিকিৎসা করি তাহলে কি বিশুদ্ধ হোমিওপ্যাথ নই?
হ্যানিম্যানের পরবর্তীকালের উত্তর-সুরীদের পদ্ধতি অনুসারে চিকিৎসা করি তাহলে কি বিশুদ্ধ হোমিওপ্যাথ নই?
তবে কেউ কেউ আবার নিজেকে হ্যানিম্যনিয়ান ( Hahnemanian Homoeopath ) ক্লাসিকাল পদ্ধতির চিকিৎসক বলে অভিহিত করেন।
তাহলে হ্যানিমানিত্তোর হোমিওপ্যাথগণকে অ্যালেনিয়ান (Follower of Allen ), বোৱিকিয়ান (Follower of Borick) বা কেন্টিয়ান (Follower of Kents) বা পাওলিয়ান (Follower of Powell) ইত্যাদি নামে ডাকতে হয়। কিন্তু সর্বক্ষেত্রেই আসল কথা সেই ‘সমঃ সমং সময়তি ও রোগীর আরোগ্য বিধান’ করে সুস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠা করা।
তাই বিশুদ্ধ ও অবিশুদ্ধ হোমিওপ্যাথির বা হোমিওপ্যাথের কথা আসে কি করে। তবে একবার হোমিওপ্যাথির ইতিহাস আলোচনা করে দেখে নেওয়া যাক হ্যানিম্যানের সময় থেকে আজ পর্যন্ত কিভাবে বিভিন্ন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকগণ রোগী আরোগ্যের পথে অগ্রসর হয়েছেন ও কিভাবে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ওষুধ নির্বাচন করার কথা বলেছেন। এই পদ্ধতিগুলির সবগুলিই কিন্তু হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার সোপান। তাই কেবল অন্ধবিশ্বাসে পিওর ও ইমপিওর হোমিওপ্যাথ বা হোমিওপ্যাথি না বলে ভেবে দেখুন আর কি কি ভাবে একে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়।
বিভিন্ন প্রকারের ওষুধ নির্ণয় পদ্ধতি হোমিও পদ্ধতির প্রকারঃ
১) স্পেসিফিক ওষুধ
[Pescribing on the Principle of Specific Similarity]
ডাঃ হ্যানিম্যান, ডাঃ ক্লার্ক, ডাঃ অস্কার বোরিক, ডাঃ এনডারসন এবং জন ওয়ারি এই নীতির সমর্থক, তাছাড়া হোমিওপ্যাথি আবিষ্কারের প্রথম কথাটি হল সিঙ্কোনা বার্ক এগু ফিভার (Agu Fever) – এর স্পেসিফিক। এছাড়া
বেলেডোনা—স্কালেট ফিভারের,
আর্সেনিক অ্যালবা–কলেরা
পালসেটিলা – হামের,
মাইরিস্টিকা–আঙ্গুলহাঁড়া
এন্টিমটার্ট—চিকেন পক্সের,
স্ট্যাফিসাগ্রিয়া-আঞ্জনি
ড্রসেরা—হুপিং কাশির,
ভিরেট্রাম আলবাম- এশিয়াটিক কলেরার
ইউপেটোরিয়াম—ডেঙ্গুজ্বরের,
আর্স আয়োড–টিউবারকিউলোসিসের,
স্পেসিফিক।
আর আমরা এক কথায় এরুপ শতশত ওষুধের নাম করতে পারি।
২) প্রোফাইল্যাকটিকস ও জেনাস এপিডেমিকাস অনুসারে চিকিৎসা
[Pronciples of prescribing on the basis of
Prophylactics and Genus Epidemicus]
এই মতের সমর্থক ডাঃ হ্যানিম্যান, ক্লার্ক, বোরিক, অ্যালেন এমনকি বর্তমানকালের চিকিৎসক ডাঃ পিয়াস স্কিমড (Dr. Pierce Schmidt), তাঁরা হুপিং কাশিতে
পাটুসিন – ২০০ মাম্পস–প্যারোটিডিনাম—৩০
কলেরাতে ক্যাম্ফার — ২০০, কিউ প্রাম আর্স-৩০,
বসন্তে—-ভেরিওলিনাম – ২০০,ম্যালেড্রিনাম – ২০০, ভ্যাকসিনিনাম-২০০,
ডিপথেরিয়া——ডিপথেরিনাম – ১০ এম
ইনফ্লুয়েঞ্জাতে—ইনফ্লুইইয়েঞ্জিনাম— ২০০
হামে- মরবিলিনাম – ২০০, জলাতঙ্কে— লাইসিন, হাইড্রোফোবিনাম
টাইফয়েডে——টাইফয়েডিনাম — ২০০, টিটেনাসে – লিডাম পল – ২০০,
কুকুর-বিড়াল কামড়ালে লিডাম পল – ২০০ ইত্যাদিকে প্রোফাইল্যাকটিক হিসেবে
ব্যবহার করেছেন।
৩) চরিত্রগত লক্ষণ সমষ্টি নিয়ে চিকিৎসা [Remedies Prescribed on the Principle of Totality of Characteristic symptoms]
ডাঃ হ্যানিম্যান, বোয়েনিং হোসেন, বোগার, কেন্ট, ডাঃ হোল কম্ব, এইচ.টি. ক্লার্ক, ই.বি. ন্যাশ, ডাঃ গিবসন মিলার, ডাঃ সি.এম. ফল ও ডাঃ রবার্ট এই মতানুসারে চিকিৎসা করার কথা বলেছেন। এক্ষেত্রে আমরা বোয়েনিং হোসেন-এর সাত রকমের লক্ষণের কথা উল্লেখ করতে পারি যেমন-
1. Qis-make up of the patient.
2. Qid-peculiar sensations of the patient.
3. Ubi-peculiar locations of the disease.
4. Cur-Causes of the disease.
5. Qamodo-modality of time.
6. Qanto-modality of circumstances.
7. Qibs Axils-Concomitant symtomps.
আর এদের সমষ্টি অনুসারে চিকিৎসা করার কথা উপরিলিখিত চিকিৎসকগণ এক বাক্যে স্বীকার করেছেন।
৪) কী-নোট প্রথার চিকিৎসা
[Prescribing on the basis of Keynote Characteristic symptoms]
ডাঃ অ্যালেন ও ডাঃ গ্যারেনসি এই মতের প্রথম সমর্থক। এছাড়া পি.পি. ওয়েলস, ডাঃ চ্যামলের, স্টুয়ার্ট ক্লোজ, এফ. এস. স্মিথ, ভন লিপি, বোগার ও ডাঃ ক্ল্যার্ক ও এই মতের দিশারী। যেমন রোগ-
প্রথম বাম দিকে তারপর ডানদিকে ল্যাকেসিস,
প্রথম ডান দিকে তারপর বামদিকে – লাইকো,
ডান, পরে বাম ও পুনঃরায় ডানদিকে—ল্যাক ক্যান,
নিম্নাংগ থেকে রোগ আরম্ভ হয়ে উপর দিকে ওঠে—লিডাম পল,
রোগ উর্দ্ধাংগ থেকে নিচের দিকে নামে – ক্যালমিয়া প্রভৃতি মূল্যবান লক্ষণানুসারে শতশত ক্ষেত্রে ওষুধ প্রয়োগ করা যায়।
৫) ধাতুগত লক্ষণানুসারে চিকিৎসা
[Prescribing on the basis of Constitutional Symptoms]
এই ক্ষেত্রে ডঃ গ্রাভগল (Dr. Grovugyl) তিন রকম ধাতুতে সবাইকে ভাগ করেছেন, যেমন—হাইড্রোজিনয়েড, অক্সিজিনয়েড ও কার্বনাইট্রোজিনয়েড। ডঃ অ্যলেনডি (Dr. Allandy) সকলকে চার রকম ধাতুতে ভাগ করেছেন অ্যাটনি- প্লাসটিক (Atoni-Plastic), টনি -প্লাসটিক (Toni – plastic), টনি অ্যাপ্লাসটিক (Toni- aplastic) এবং অ্যাটনি-অ্যাপ্লাসটিক (Atoni-aplastic), ডঃ নিবেল (Dr. Nebel) তিন রকমে ভাগ করেছেন যেমন—কার্বো ক্যালসিস (Carbo Calsis), ফসফো- ক্যালসিস (Phospho-calsis) এবং ফ্লুরোক্যালসিস (Fluoro-calsis)।
তবে ডাঃ কেন্ট, ডাঃ হ্যানিম্যান, ডাঃ লুটজ (Dr. Lutz) এবং বর্তমানে ডাঃ টমাস প্যাবলো প্যাসচারো (Dr. Thomas Pablao Paschero) এই মতের দিশারী।
৬) মনোদৈহিক লক্ষণানুসারে চিকিৎসা
[Prescribing on the basis of Psychosomatism]
এই মতের প্রবক্তা ডাঃ টমাস প্যাবলো প্যাসচারো (Dr. Tomas Pablo Paschero)। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে ডাঃ হ্যানিম্যানেরই নীতির উপর ভিত্তি করেই হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা করার কথা বলেছিলেন।
৭) রেপার্টারী করে চিকিৎসা
[Prescribing on the basis of Repetorization]
রেপার্টারী করে চিকিৎসার করার ক্ষেত্রে প্রধানতঃ বোনিংহোসেন ও ডাঃ কেন্টের পদ্ধতি আমাদের সকলের কাছে পরিচিত। তবে এছাড়াও ডাঃ বেলের ডায়ারিয়া, ডাঃ মিনটিনের উইটরইন ডিজিজ, ডাঃ বোরিকের মেটেরিয়া মেডিকা, ডাঃ অ্যালেনের এনসাইক্লোপিডিয়ার একাদশ ও দ্বাদশ খন্ডে রেপার্টরী আছে, আর আছে ডাঃ জেদীব ও ডাঃ নারেব রেপারেটরী।
৮) কারণ অনুসারে চিকিৎসা
[Prescribing on the basis of Causation]
ডাঃ হ্যানিম্যান কারণ কে দুভাগে ভাগ করেছিলেন (ক) অতি সম্প্রতি কারন, (খ) অনেকদিন আগের কারন।
আর এই দুভাগে ওষুধ নির্ণয়ের কথা বলেছেন। ডাঃ ক্লার্ক এবং বর্তমানে হরবংস লাল ভরদ্বাজ (Harbans Lal Bhardwaj) ও এস.পি. কোপিকার (Dr. S.P. Koppikar), ডাঃ পাঠক, পি শংকরণ ইত্যাদিকে কারণ অনুসারে চিকিৎসা করতে আমরা দেখেছি।
৯) চাপা দেওয়া, লক্ষণগুলি অনুসন্ধান করে চিকিৎসা
[Prescribing on the basis of removal of sppressions]
ডাঃ বারনেট, ডাঃ বারনভিল (Dr. Bernoville) এবং ডাঃ এ. নোবেল (Dr. A.Nobel) এবং বর্তমানে এম. বি. দেশাই এই পথের প্রদর্শক।
১০) ওষুধ সৃষ্ট মায়াজামের প্রতিকার করে চিকিৎসা [Prescribing on the basis of Drug Miasms]
বর্তমানে অ্যালোপ্যাথিক ওষুধ যেমন অ্যান্টিবায়োটিক, কেমোথেরাপি, ভিটামিন থেরাপি ও হরমোন থেরাপি প্রভৃতি প্রচন্ড শক্তিশালী ওষুধ সমূহ প্রচুর পরিমাণে ব্যবহারের ফলে যে রোগ বা কৃত্রিম ব্যাধির সৃষ্টি হয় তাকেই ওষুধ সৃষ্ট মায়াজম বলে ডাঃ কেন্ট তাঁর মেটেরিয়া মেডিকাতে সিকেলী কর অধ্যায়ে এই মায়াজামের কথা বলেছেন তাছাড়া ডাঃ গারেন্সি, ডাঃ টি. অ্যাডেল স্কোয়ারটাজ (Dr. T. Adele Schwartz ) এবং সি.ভি. দেশাই এই নীতি অনুসারে চিকিৎসার কথা বলেছেন।
১১) ভ্যাকসিন মায়াজাম পদ্ধতি
[Prescribing on the basis of Vaccinosis Miasm]
ডাঃ পি. এল. বেনথেক (Dr. P. L. Benthack), ডাঃ বার্নেট, এমন কি ডাঃ এস.আর. ওয়াদিয়া বলেছেন বসন্তের, কলেরার যেসব ভ্যাকসিন দেওয়া হয় বা B.C.G. টিকা, ট্রিপল অ্যান্টিজেন, পোলিও ভ্যাকসিন ও টিটেনাস টক্সয়েড প্রভৃতি রোগীর দেহে যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করায় এক প্রকার স্থায়ী ধাতুগত রোগ সৃষ্টি হতে দেখা যায়। আর ঐ সব রোগগুলির প্রকৃত কারণ নির্ণয় করে চিকিৎসা করার নীতিই হল এই মতের প্রধান বৈশিষ্ট্য। এর জন্য সাধারণতঃ খুজা, সাইলিসিয়া, মেজেরিয়াম, কেলি মিউর, সালফাব প্রভৃতি আমরা অনায়াসে ব্যবহার করতে পারি বা ব্যবহার করেও থাকি।
১২) সোরা, সাইকোসিস, সিফিলিস, মায়াজাম আবিস্কার করে চিকিৎসা [Prescribing on the basis of Psora, Sycosis, Syphilis miasms ]
হ্যানিম্যান থেকে শুরু করে বর্তমান কালের সকল চিকিৎসকই এই মতালম্বী।
১৩) নোসোড ও বাওয়েল নোসোড দ্বারা চিকিৎসা
[Prescribing the Nosodes and Bowel Nosodes]
সোরিনাম, মেডোরিন, সিফিলিনাম, টিউবারকিউলিনাম প্রভৃতি নোসোড ছাড়াও গ্লাসগোর ডাঃ প্যাটারসন যেকটি বাওয়েল, নোসোড আবিস্কার করেছেন, যেমন মর্গান পিওর, মর্গান গার্টনার, প্রোটীয়াস প্রভৃতির দ্বারা চিকিৎসা এই নীতির উপর নির্ভরশীল।
১৪) রক্ত পরীক্ষা দ্বারা ওষুধ নির্বাচন
[Prescribing on the Blood Investigations]
ডাঃ সি.সি. দেশাই, ডাঃ দেওয়ান হরিশ চাঁদ ও ডাঃ লরেন্স এবং স্টারটন এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করার কথা বলেছেন ।
১৫) বাহ্যিকভাবে ওষুধ প্রয়োগে চিকিৎসা
[Remedies Prescribed on the Basis of External Application]
পিয়ার্স, ক্লার্ক, বোরিক, জোনস, রয়েল, জোসেট ও কুপার প্রভৃতি বাহ্যিকভাবে ওষুধ প্রয়োগের কথা বলেছেন। যেমন কোথাও আঘাত লেগে প্রচন্ড ব্যথা বা টাটানি হলে আর্ণিকা মারার লোশন করে বাহ্যিকভাবে প্রয়োগ করতে হয়; আর সঙ্গে সঙ্গে এর শক্তিকৃত ওষুধ খাওয়া যায়। আবার কোন জায়গায় আঘাত লেগে কেটে গেলে ক্যালেন্ডুলা মাদার বাহ্যিকভাবে উপকারী। তাছাড়া পায়ের বা হাতের আঙুলের ডগা থেঁতলে গেলে বিভিন্ন প্রকারের ওষুধ নির্ণয় পদ্ধতি
হাইপেরিকাম মাদার অবর্থ। আবার পুড়ে গেলে ক্যান্থারিস মাদার ও বোলতা, ভীমরুল, বিছে ও ইদুর দংশনে লিডাম মাদার ও পোকা খাওয়া দাঁতে প্লাস্টাগো মাদার লাগালে উপশম হয়ই।
১৬) অটোথেরাপি
[Prescribing on the basis of Autotheraphy]
ডাঃ জেমস রুনসি (Dr. James Runcie 1988), ও ডাঃ এফ. এক্স ক্লিনিক ও ডাঃ ডেট্রোইট মিচ (Dr. Detroit Mitch) – আমবাত, প্রুরাইটিস, এপিসট্যাকসিস প্রভৃতি কেসে এই মতে চিকিৎসার কথা বলেছেন।
১৭) অন্টারনেশান এবং কম্বিনেশান কম্লেক্স হোমিও পদ্ধতিতে চিকিৎসা [Prescribing on the basis of Alternations &
Combinations of Remedies Complex Homeo]
ডাঃ পাওেল,ডাঃ গুয়েন রিচার্ড (Dr. Guyon Richards), ডাঃ ইয়ান ম্যাককিনলে বার্ণস (Dr. Ian Mckinlay Burns), ডাঃ এস.এস. কুমটা (Dr. S.S. Kumta), ডাঃ এল. এম. ষ্ট্যানটন (Dr. L. M.Stanton) এমন কি ডাঃ পি শংকরণক, ডাঃ পি বানার্জিকে এই নীতিতে চিকিৎসা করতে দেখা গেছে।
১৮) টটোপ্যাথি
[Prescribing on the basis of Tautopathy]
যে পদার্থের বিষক্রিয়ার কুফলে রোগ সৃষ্টি হয়, রোগীকে সেই জিনিসের শক্তিকৃত ৬, ৩০, ২০০ প্রভৃতি ব্যবহারের দ্বারা চিকিৎসা করাকে টটোপ্যাথি বলে। ডাঃ রামলাল প্যাটেল, ডাঃ পি. শংকরণ, ডাঃ এস.আর. ওয়াদিয়া এই পদ্ধতির সমর্থক।
১৯) অরগ্যানপ্যাথিক ওষুধ নির্ধারণদ্বারা চিকিৎসা
[Prescribing on the basis of Organopathic Remedies]
ডাঃ বার্নেট, ক্লার্ক, ডাঃ কুপার, ডাঃ বোগার এই পদ্ধতির উল্লেখ করেছেন।
২০) মইয়ের মত ধাপে ধাপে লক্ষণ দেখে চিকিৎসা
[Prescribing on the basis of Ladder like symptoms]
ডাঃ বার্নেট, ডাঃ ড্রাইসড্রেল (Dr. Drysdale) ও ক্যানন রোল্যান্ড অপকার ( Dr. Canon Roland Upcher) এই পদ্ধতি অনুসারে চিকিৎসার কথা বলেছেন
২১) অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন অনুসারে চিকিৎসা
[Prescribing on the basis of Allergic Reaction]
ডাঃ আরনেস্ট এল. গডফ্রে (Dr. Ernest L. Godfrey), ডাঃ এস.আর. ওরাদিয়া, ডাঃ হোমিব্যাচ (Dr. Houmbach), ডাঃ ই.এম. হেল (E.M. Hale) এবং প্রফেসর ওয়েনস (Prof. Owens) ক্লিনিক্যাল অ্যালার্জিক রিঅ্যাকশন অনুসারে চিকিৎসার কথা
বলেছেন।
২২) ফিফটি মিলিসিম্যাল স্কেলের ওষুধ ব্যবহারে চিকিৎসা
[Prescribing on the basis of Potentiseing repetation and dilution by Fifty Millisimal Potency]
ডাঃ হ্যানিম্যান, বোরিক, বোগার, ন্যাশ, হেরিং, লিপি, কেন্ট, এমনকি বর্তমানের বহু চিকিৎসকই এই পদ্ধতি অনুসারে সাফল্যের সঙ্গে চিকিৎসা করছেন ।
২৩) রোগীর মাথার চুলের সাহায্যে দূর থেকে চিকিৎসা (Transmission of Homeo. Drug energy from a distance).
রোগীর মাথার চুলের সাহায্যে যে কোন রোগ আরোগ্য করা যায়
রোগী যত দূরেই থাকুন তার রোগের বৃত্তান্ত জেনে তার মাথার একটি চুল তুলে নিয়ে নির্ব্বাচিত ঔষধের শিশির মধ্যে ঐ চুলের গোড়াটি সংযুক্ত করে চিকিৎসা ,লিখেছেন ডাঃ বি. সাহানি (Transmission of Homeo. Drug energy from a distance, A new discovery).
২৪) কেবল মানসিক লক্ষণ এর মাধ্যমে চিকিৎসা (Sehgal’s method)ঃ
সেহগালের পদ্ধতিটি রোগীর ব্যবহার করা নির্দিষ্ট অঙ্গভঙ্গি, শব্দ বা অভিব্যক্তি বোঝার মানসিক লক্ষণের উপর ভিত্তি করে।সেহগাল পদ্ধতির প্রতিষ্ঠাতা ড. এম. এল. সেহগাল।
২৫)ইলেক্ট্রো হোমিওপ্যাথি Electro Homeopathy:
ইলেক্ট্রো হোমিওপ্যাথি হল অত্যাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি যা রোগাক্রান্ত ব্যক্তিদের লসিকা ও রক্তের মধ্যে হোমিওস্ট্যাসিস বজায় রাখতে সাহায্য করে।
ভারত, জার্মানি, ফ্রান্স এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে চিকিত্সার পদ্ধতিটি ব্যাপকভাবে অনুশীলন করা হয়। ইলেক্ট্রো হোমিওপ্যাথি 1865 সালে ইতালিতে ডাঃ কাউন্ট সিজার ম্যাটি Dr. Count Caeser Mattie আবিষ্কার করেছিলেন। ইলেক্ট্রো-হোমিওপ্যাথি শব্দটি তিনটি শব্দের সংমিশ্রণ যেমন ইলেক্ট্রো, হোমিও এবং প্যাথি। ইলেক্ট্রো বলতে বোঝায় জীবের কারণে ঘটে যাওয়া কোনো ব্যাঘাত, যা ঔষধি শক্তি/ওডি ফোর্স/এর মতো শক্তির বিনিময়ের মাধ্যমে শরীর থেকে বহিষ্কৃত হয় এবং দেহের জৈব টিস্যু পুনরুদ্ধার করে।
২৬) রিয়াল হোমিওপ্যাথি গো-ব্যাক প্রসিডিওর Real Homoeopathy | GO BACK Procedure;
এটি হোমিওপ্যাথির একটি নতুন পদ্ধতি এর আবিস্কারক হচ্ছে ডাঃ শ্যামল কুমার দাস। এই রকম আরও অনেক পদ্ধতি রয়েছে বা আরও নতুন নতুন যুগপোযোগী হোমিও কেন্দ্রিক চিকিৎসা পদ্ধতি আবিস্কৃত হবে। তাই বলে আমি যে পদ্ধতিতে চিকিৎসা করি সেটাই ঠিক বাকি ভুল বা কার্যকরী না সেটা বলা কেমন হবে? যারা কেবল নিজেদের শুদ্ধ হোমিওপ্যাথ বলে বাকিদের অশুদ্ধ বলে কঠাক্ষ করে তাদের থেকে আমাদের দুরে থাকতে হবে,তাদের উদ্দ্যেশ্য হচ্ছে রোগীদের সু চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা। আমরা ইতিহাস দেখলে বুঝতে পারি হোমিওপ্যাথিতে এই রকম চিকিৎসা পদ্ধত্তির পার্থক্য অনেক আগে থেকেই আছে এবং তারা সুচিকিৎসা দিয়ে সফলতা অর্জন করেছেন,তার জন্য তাদের নাম চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছে এবং থাকবে। বর্তমানে কিছু স্বার্থলোভী চিকিৎসক নিজেদের পদ্ধতিকে ঠিক বাকি গুলোকে ভুল বলে বিভ্রান্ত ছড়ানোর চেষ্টা করছে যা কোনদিনই গ্রহণযোগ্য হবে না। আশাকরী আপনারা বিষয়টি বুঝতে পারবেন । সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন মানুষের ভালো করুন ।