■□ ■□
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°
□ আমরা আমাদের প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য রাখিনা। সেটা জ্ঞাতসারেও হতে পারে। আবার অজ্ঞাতেও। কেউ কেউ আবার এ ব্যাপারে খুব একটা ভাবতেও আগ্রহী হন না। আর উঠতি বয়সীরাতো আরও উদাসীন।
□ আমি মারিয়া নামে ৩২ বছর বয়সী একজন দায়িত্ববান নারীকে চিনি। তার আপাতদৃষ্টিতে স্বাস্থ্য চমৎকার দুই সন্তানের মা। তার ছোট মেয়েটি মাতৃস্তন্য পান করছে এখনো। তার তেমন কোনো রোগের উপসর্গ নেই তবে দাঁতগুলো একটু ভঙ্গুর। তাকে ক্যালসিয়াম খাবার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বলাতে তিনি বেশ আপত্তি তুললেন এবং এটি গ্রহণের তার মতো স্বাস্থ্যবতী নারীর কোনো প্রয়োজন থাকতে পারে, তা তিনি মানতে রাজি নন। এ রকম মনোভাব নিয়ে অনেক সচেতন ও শিক্ষিত নারীকে জীবনযাপন করতে দেখেছি। তারা অনেকে ক্যালসিয়ামের অভাবে ভুগছেন। আর যখন তারা ক্যালসিয়াম গ্রহণে আগ্রহী হন না, তখন বেশ অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যায়।
■□ এই পোস্টটিতে ক্যালসিয়াম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল, যা আপনাকে একটু হলেও এই গুরুত্বপুর্ন খনিজ সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে।
■□ মানবদেহে ক্যালসিয়ামের কার্যকারিতাঃ
● হাঁড় ও দাঁত মজবুত করে ও গঠনে সাহায্য করে।
● পেশীর সংকোচন এবং হৃদযন্ত্রের ক্রিয়াকলাপ ঠিক রাখে।
● রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
● হরমোন নিঃসরণ ও দেহের বিভিন্ন রকম কোষের বিভাজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
● দেহের ভিতরে রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না এবং কোথাও কেটে বা ছিঁড়ে গেলে সেখানে রক্ত জমাট বাঁধতে সহায়তা করে।
● রাসায়নিক দূষণ থেকে দেহকে রক্ষণ করে। ভারী ধাতুর বিষক্রিয়া থেকে দেহকে বাঁচাতে ক্যালসিয়াম অন্যতম উপাদান। বিশেষত যারা কল-কারখানায় কর্মরত বা শিল্প এলাকায় বসবাস করেন। ঢাকার মতো যে সব শহরে হাওয়া বিপুল পরিমাণ সীসা ঘুরে বেড়ায়, সে সব শহরের মানুষের নিয়মিত ক্যালসিয়াম খাওয়া প্রয়োজন।
● অগ্ন্যাশয়ের বিটা, শেষে ইনসুলিন ভোরতে সাহায্য করে ফলে ডায়াবেটিস এবং এর কারণে চোখ, কিডনী, হৃদযন্ত্র বা ত্বকের সমস্যা থেকে মানুষকে রক্ষা করতে পারে।
■□ রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা ঠিক রাখুনঃ
● দেহের ভিতরে ক্যালসিয়ামের মূল আবাস হল হাঁড় ও দাঁত। একই সাথে রক্তেও কিছু পরিমাণ ক্যালসিয়াম থাকে। রক্তে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ নির্দিষ্ট মাত্রায় নিয়ন্ত্রিত হওয়া জরুরী। কেননা এখান থেকেই শরীরের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ক্যালসিয়াম বণ্টন হয়। রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমে গেলে, শরীরের চাহিদা মেটাতে হাঁড়ে সঞ্চিত ক্যালসিয়াম রক্তে আসতে থাকে যার ফলে হাঁড় ক্ষয় শুরু হয়। রক্তে ক্যালসিয়ামের মাত্রা ঠিক রাখলে হাঁড় ও দাঁত মজবুত থাকে।
■□ মেয়েদের বেশি ক্যালসিয়ামের প্রয়োজন হয় কেনঃ
● অস্থিতে ক্যালসিয়ামের সমতা বজায় রাখে হরমোন। হরমোনের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার তারতম্যের জন্য ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের ক্যালসিয়ামের ঘাটতি বেশি করে হয়।
● খনিজ পদার্থ ও কোষ-কলা অস্থির গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এ দুই উপাদানের উৎপত্তি এবং ক্ষয়ের প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয় হরমোন ও ভিটামিন ডি দ্বারা।
● জন্মবিরতিকরণ বড়ি বা ঔষুধ ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারণ হতে পারে। তাই এসব বড়ি নিয়মিত খেলে, ক্যালসিয়ামের ঔষুধও নিয়মিত খেয়ে যাওয়া উচিত।
● অস্থি ক্ষয় ও অস্থি তৈরির প্রক্রিয়ার মধ্যে ভারসাম্যহানি ঘটার কারণেই অস্টিও পোরোসিসের মত রোগের সূত্রপাত হয়। ফলে সামান্য আঘাতেই হাঁড়ে চিড় ধরা, হাঁড় ভাঙা থেকে শুরু করে, শেষে একেবারে চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এত নিঃশব্দে এই ভয়ানক রোগের আগমন ঘটে যে, আমরা বুঝতেই পারি না আমাদের ক্যালসিয়াম ঘাটতির কথা।
■□ ওষুধ, অসুখ ও ক্যালসিয়াম ঘাটতিঃ
● এ্যান্টসিড, অবসাদ কমাবার ওষুধ, ইপিলেন্সির ওষুধ ও বেদনানাশক ওষুধ কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারন হিসাবে দেখা দিতে পারে।
● মানসিক অবসাদ ও ডিসপ্রশনে ভুগছেন এমন অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে, ক্যালসিয়ামের অভাবে ভুগছেন তিনি।
● উচ্চ রক্তচাপ ও অন্ত্রির ক্যান্সার দেখা দিতে পারে ক্যালসিয়ামের দীর্ঘস্থায়ী ঘাটতিতে।
● এ্যাকজিমা জাতীয় চর্মরোগ, মানসিক অস্থিরতা, অল্পতেই মেজাজ বিগড়ে যাওয়া, ভঙ্গুর নখ, মাংস পেশীর খিঁচ ধরা ইত্যাদি ক্ষেত্র বিশেষে ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারনে দেখা দেয়।
■□ খাদ্যাভ্যাস ও ক্যালসিয়ামঃ
● অতিরিক্ত প্রাণিজ আমিষ ও স্নেহ জাতীয় খ্যাদ্য পরিহার করুনঃ
নিয়মিত বেশি পরিমাণে প্রাণিজ আমিষ ও স্নেহ জাতীয় খাদ্য না খাওয়াটাই উত্তম কারন এগুলো রক্তে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ কমিয়ে দেয়। প্রাণিজ আমিষ শরীরে প্রচুর ফসফো উৎপন্ন করে, যা ফলশ্রুতিতে প্রস্রাবের সাথে ক্যালসিয়ামকে বের করে দেয়। বিশেষভাবে তৈরি ও সংরক্ষণ করা খাদ্যদ্রব্য ও একই কাজ করে।
● বেশীরভাগ নিরামিষ খাবার খানঃ
সমীক্ষায় দেখা গেছে, পঞ্চাশোর্ধ বয়সে যারা নিরামিষ খান, আমিষভোজীদের চেয়ে তাদের দেহে ক্যালসিয়ামের মাত্রা ভাল থাকে।
● অন্ত্রে ক্যালসিয়াম আত্তীকরণে বাধা দেয় এ্যালুমিনিয়ামঃ
এ্যান্টাসিড ট্যাবলেট, বেকিং পাউডার, চা, টুথপেস্ট, বিট লবণ থেকে এ্যালুমিনিয়াম আমাদের দেহে প্রবেশ করে। তাই এসব পরিমিত মাত্রায় ব্যবহার করাই শ্রেয়। এ্যালুমিনিয়ামের পাত্র ব্যবহার করা উচিত নয়।
● সোডা ও কোমল পানীয় পান করার সময় সতর্কতাঃ
এসব পানীয়তে চিনি ও ফসফেট থাকে, যা ক্যালসিয়াম আত্তীকরণে বাধার সৃষ্টি করে। এরা দেহে ক্যালসিয়ামের ব্যবহারেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।
● ভারসাম্য বজায় রাখুনঃ
দুধ ও দুগ্ধজাত দ্রব্যে ক্যালসিয়াম আছে। তবে এরই সাথে ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ অন্যান্য খাবার ও খাওয়া উচিত। কেননা প্রাণিজ খাদ্য হিসেবে দুধেও ফসফরাস থাকে বা ফসফেট তৈরি করে, তাই দুধ ও অন্যান্য খাবারের মধ্যে একটি ভারসাম্য থাকা উচিত।
■ ক্যালসিয়ামের উৎসঃ মিলিগ্রাম / প্রতি ১০০ গ্রামেঃ
□■ মাছ, মাংস, ডিম, শষ্যদানা ও অন্যানঃ
● বাছা মাছ -৫২০ ● বেলে মাছ -৩৭০ ● গরুর মাংস ১০
● চাল -১০ ● ভেটকি মাছ -৪৮০ ● ডিম (হাঁসের) -৭০
● ময়দা -৪১ ● চেলা মাছের শুটকি-৩৫৯০
● ডিম (মুরগির) -৬০ ● আটা -৪৮ ● কাতলা মাছ -৫৩০
● মুরগীর মাংস -২৫ ● সেমাই -২২ ● মাগুর মাছ -১৮০৪
● খাসির মাংশ -১২ ● সুজি -১৩ ● খৈলশা মাছ -৪৬০
● খাসির কলিজা -১৭ ● চিড়া -২০ ● কই মাছ -৪১০
● ভেড়ার মাংস -১৫০ ● সুরি -২৩ ● চিংড়ি -৩২৩
● গরুর দুধ -১২০ ● ছোলা -২০২ ● পুঁটি মাছ ১১০
● ছাগলের দুধ-১৭০ ● মাষকলাই -১৫৪ ● রুই মাছ-৬৫০
● দই -১৪৯ ● মশুর ডাল -৭৫ ● চিংড়ির শুঁটকি -৪৩৮৪
● সন্দেশ ০২০৮ ● মুগ ডাল -৭৫ ● শিং মাছ -৬৭০
● পায়েশ -৩৮৮ ● চিনি -১২ ● টেংরা মাছ -২৭০
● পান -২৩০ ● রুটি -১১ ইত্যাদি।
□■ বিভিন্ন শাক, সবজি, ফল ও মসলাঃ
● লাউ শাক-৮০ ● পুঁই শাক-১৬৪ ● সিম বিচি-৬০
● পেয়ারা-২০ ● তেঁতুল-১৭০ ● কচু শাক-৪৬০
● পাট শাক-১১৩ ● ঢেঁড়শ-১১৬ ● আম-১৬
● আপেল-৫৬ ● লেটু শাক-৫০ ● ডাঁটা শাক-৮০
● বরবটি-৩৩ ● ডাব-১৫ ● আমলকি-৩৪
● সরিষার পাতা-১৫৫ ● মুলা শাক-২৮ ● ঝিঙা-১৬
● কাঁঠাল-২৬ ● বেল-৩৮ ● লাল শাক-৩৭৪
● ধনে পাতা-১৮৪ ● কাঁচা পেঁপে-১৩ ● কালো জাম-২২
● বড়ই-১১ ● কলমি শাক-১০৭ ● গাজর-২৭
● কাঁচা টমেটো-২০ ● পেঁপে-৩১ ● লিচু-৯০
● কাঁচা মরিচ-১১ ● সিম-২১০ ● বেগুন-১১
● আমড়া-৫৫ ● রসুন-৩০ ● বাঁধাকপি-৩১
● করল্লা -২৩ ● কমলা-৪০ ● পেঁয়াজ-১০৪০
● কলা-১৩ ● জিরা-১০৪০ ● হলুদ-১৫০
■□ কখন, কাদের, কতটুকু ক্যালসিয়াম প্রয়োজনঃ
● ১০-৩০ বছর বয়সঃ দৈনিক ১০০০-২০০০ মিলিগ্রাম।
● ১০ বছরের কম এবং ৩০ বছরের বেশিঃ দৈনিক ৮০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন।
● রজঃনিবৃত্ত মহিলা ও যারা হরমোন প্রতিস্থাপন বিশ্রামে ছিল বা আছেনঃ তাদের প্রতিদিন ১৫০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম প্রয়োজন হয়।
● গর্ভধারণ ও সন্তানকে স্তন্যদানের সময়ঃ প্রত্যেহ ১৫০০ থেকে ২০০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম খাওয়ানো প্রয়োজন।
● দৈনিক ২০০ মিলিগ্রামের কম ক্যালসিয়াম গ্রহণ করলে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি দেখা দিবেঃ স্বাভাবিকভাবে নিয়মিত সুষম খাদ্য খেলে শরীরের ক্যালসিয়ামের চাহিদা মিটে যায়। বাইরে থেকে ক্যালসিয়াম দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।
● বেড়ে উঠার সময়ঃ অর্থাৎ ১৫ বা ৩০ বছর পর্যন্ত যথেষ্ট পরিমাণে ক্যালসিয়াম প্রয়োজন হয়।
■□ সব ক্যালসিয়ামই একনয়ঃ
● বাজার থেকে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট কেনার সময় তাতে কি আছে তা দেখে নিন। ক্যালসিয়াম আরোটেট, ক্যালসিয়াম গ্লুকোনেট এবং ক্যালসিয়াম সাইট্রেট সবচেয়ে ভাল। এর প্রায় ৪০% ক্যালসিয়াম দেহে আত্তীকৃত হয়। ক্যালসিয়ামের কার্বোনেট ততটা কার্যকর নয়। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষের জন্য ক্যালসিয়াম কার্বোনেট কোনো কাজেই আসে না।
■□ সতর্কতাঃ
● কিডনীর সমস্যা, কিডনী বা মূত্রাশয়ে পাথর থাকলে ক্যালসিয়াম বড়ি খাবেন না।
● কোষ্ঠকাঠিন্য ও রক্তশূন্যতায় ভুগলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ক্যালসিয়াম খাবেন না।
● মানবদেহে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম যৌথভাবে কাজ করে। তাই ক্যালশিয়াম বেশি গ্রহণ করলে ম্যাগনেসিয়ামের চাহিদা বেড়ে যায়, আর তাই এই দুটোর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
□ সবথেকে বড় সতকর্তাঃ একজন ডাক্তার এর পরামর্শ ছাড়া কখনোই কনো ওষুধ সেবন করবেন না।
□ ধন্যবাদ সবাইকে।
সংগৃহীত ও সংশোধিত……….
°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°°