বর্তমানে বায়োকেমিক চিকিৎসা পদ্ধতি হচ্ছে একটি সফল পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া মুক্ত সর্বজন স্বীকৃত সর্বজন গ্রহীত চিকিৎসা পদ্ধতি।অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে জটিলতর,পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া যুক্ত সেখানে বায়োকেমিক চিকিৎসা পদ্ধতি হচ্ছে একটি সহজ সরল বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসা পদ্ধতি।এখন জেনে নেয়া এই মহান চিকিৎসা পদ্ধতি্র ইতিহাস।
বায়োকেমিক চিকিৎসা পদ্ধতির ইতিহাস
বায়োকেমিক চিকিৎসা পদ্ধতির প্রতিষ্ঠাতা হচ্ছে ডাঃ উইলহেম হেনরিচ সুসলার ।যিনি ২১ শে আগষ্ট ১৮২১ খ্রীঃ এ জার্মানিতে জন্ম গ্রহণ করেন আর ৩০শে ১৮৯৮ খ্রীঃ এ পরলোক গমন করেন। তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত সফল হোমিওপ্যাথি ডাক্তার ছিলেন ।পরবর্তিতে তিনি বায়োকেমিক চিকিৎসা পদ্ধতির আবিষ্কার করে সেই পদ্ধতিতে সফলভাবে চিকিৎসা করেন আর নতুন এক চিকিৎসা পদ্ধতি বায়োকেমিক চিকিৎসা পদ্ধতি মানবকল্যানের জন্য মানবজগতকে উপহার দেন।
কিন্তু হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতির বিশালতা,ঔষেধের সংখ্যাধিক্যতা,ওষুধ নির্ধারনের জটিলতা তার মনকে বিক্ষিপ্ত করে তুলেছিল এবং পরিচালিত করেছিল নতুন সত্যানুসন্ধানে নতুন আবিষ্কারে।হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার এতো জটিলতা সকলের মনকে বিচলিত করে।হোমিওপ্যাথি ঔষধ সংখ্যা অনেক তার আবার লক্ষণ অনেক। আবার শক্তি দশমিক শক্তি 1x থেক 200x শতমিক শক্তি ১থেকে ১কোটি ১০ কোটি আবার ০/১ থেকে ০/৩০ এতো শক্তি আর ঔষধের পালা।তা থেকে কোন কোন লক্ষণে কোন ঔষধ নির্বাচন করবেন কত শক্তি নির্বাচন করবেন তা নিয়ে জটিলতা লক্ষ্য করা যায় ঔষধ নির্বাচন করার পরও সংশয় থেকে যায়।হোমিওপ্যাথির এই জটিলতা ডাঃ সুসলারের মনকে আঘাত করেছিল।তাই তিনি নতুন আবিষ্কারের দিকে এগিয়ে যান।
বায়োকেমিক চিকিৎসা পদ্ধতি সম্বন্ধে বিজ্ঞানীদের মতামত
জৈব রসায়ন বিজ্ঞান সম্পর্কে প্রথমে ১৮৩২ সালে Staps Archiv পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল ‘All the essential component parts of the human body are great remedies’ অর্থাৎ মানব দেহের সমস্ত প্রয়োজনীয় উপাদানগুলি হলো মহৎ ঔষধ। এবং ওই পত্রিকাতেই ১৮৪৬ সালে আরেকটি বর্ণনা প্রকাশিত হয়েছিল তা হল – ‘All constituents of the human body act on such organs principally where they have a function.’ মানবদেহের সমস্ত উপাদান প্রধানত সেই অঙ্গগুলির উপর কাজ করে,যেখানে তাদের উপস্থিতি বা একটি কাজ আছে। ‘
বৈজ্ঞানিক রুডলফ ভার্কো সেলুলার প্যাথলজি (cellular pathology) সম্বন্ধে বলেছেন – ‘All disease are based upon a change in function or condition of cells in the body’ অর্থাৎ ‘সমস্ত রোগ শরীরের কোষের ক্রিয়াকলাপ বা অবস্থার পরিবর্তনের উপর ভিত্তি করে ‘ এবং রোমান বৈজ্ঞানিক প্রফেসর মোলস্কট বলেছেন -‘The structure and viability of the organ depends upon the presence of the necessary quahtntities of inorganic constituents’
অর্থাৎ অঙ্গের গঠন এবং কার্যকারিতা অজৈব উপাদানগুলির প্রয়োজনীয় পরিমাণের উপস্থিতির উপর নির্ভর করে। জৈব রসায়ন বিজ্ঞানের এই মহাসত্য তথ্যসমূহ ডাঃ সুসলারকে জৈব রসায়ন বিজ্ঞান থেকে জৈব রাসায়নিক চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রবর্তন করতে উৎসাহিত করেছিল। যেটি আজ আমরা বায়োকেমিক চিকিৎসা পদ্ধতি নামে জেনে থাকি।
ডাঃ সুসলারের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল
পরবর্তীকালে অক্লান্ত পরিশ্রমে বহুপ্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফল হিসেবে ডাঃ সুসলার General Homeopathic Journal- এ ১৮৭৩ খ্রীস্টাব্দে ‘An abridged Homeo Therapy ‘ অর্থাৎ একটি ‘সংক্ষিপ্ত হোমিও থেরাপি ‘ নামক তার নিজস্ব চিকিৎসা পদ্ধতি সম্বন্ধে লিখতে শুরু করেন। ১৮৭৪ খ্রিস্টাব্দে তিনি লিখেছেন ‘Restoration of the cell and thereby of the body will result from restoration of the deficit of the inorganic salts. ‘ অর্থাৎ অজৈব লবণের ঘাটতি পুনরুদ্ধারের ফলে কোষ এবং এর দ্বারা শরীরের পুনরুদ্ধার হবে।
‘All the essential component parts of the human body are great remedies’ অর্থাৎ মানব দেহের সমস্ত প্রয়োজনীয় উপাদানগুলি হলো মহৎ ঔষধ। কথাটি Dr. Lorbacher of Lupzig,Dr. H.C.G. Luyties, Dr. C. Hering, Dr. J.T.O. Connor, M.D, Dr. M. Cocetti Walker, M.D. of Dundee, Scotland প্রভৃতি হাজার হাজার চিন্তাশীল ব্যাক্তি ও প্রগতিশীল চিকিৎসক কর্তৃক সুপরীক্ষিত হয়ে ডাঃ সুসলার কর্তৃক মূল নীতি ও আদর্শ হিসেবে পরিপক্কতা লাভ করে পূর্ণাঙ্গ জৈব রাসায়নিক চিকিৎসা বিজ্ঞান বায়োকেমিক চিকিৎসা হিসাবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
হোমিওপ্যাথি ও বায়োকেমিক একই চিকিৎসা পদ্ধতি না আলাদা?
শেষ পর্যন্ত ডাঃ সুসলার তার নিজস্ব চিকিৎসা পদ্ধতিকে স্বতন্ত্র চিকিৎসা পদ্ধতি হিসাবে প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।তিনি বলেন:
‘The inorganic substances in the blood and tissues are sufficient to heal all diseases which are curable at all. If the remedies are used according to the symptoms, the desired end will be gained by means of the application of natural laws.’
অর্থাৎ ‘রক্ত এবং কলাতে অজৈব পদার্থগুলি সমস্ত রোগ নিরাময়ের জন্য যথেষ্ট, যা সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য। যদি লক্ষণ অনুযায়ী ঔষধ ব্যবহার করা হয়, তাহলে প্রাকৃতিক নিয়মের প্রয়োগের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ করা যাবে। ‘
তাঁর মৃত্যুর পূর্বে, সর্বশেষ সংস্করণে তিনি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতির সঙ্গে তার চিকিৎসা আলাদা করবার জন্য লিখেছেন-
‘The biochemic method of treatment is not based upon the Homeopathic law of cure, but upan physic-logico-chemical processes that take place within the organism.’
অর্থাৎ
বায়োকেমিক চিকিৎসা পদ্ধতি হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার আইনের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত নয়, বরং জীবের ভিতরে সংঘটিত শারীরিক জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলির উপর ভিত্তি করে।
ডাঃ সুসলারের জীবদ্দশায় তাঁর অনুগামী Dr. W. Carey চিকিৎসকদের সুবিধার জন্য ১৮৯৪ খ্রীষ্টাব্দে ‘ The Biochemic Systems of Medicine’ নামক বই প্রকাশ করেছিলেন।ডাঃ সুসলার ১৮৯৮ সালে ইহলোক ত্যাগ করেন।
আসুন আমরা সকলে মিলে এই সুন্দর সহজ চিকিৎসা পদ্ধতিকে এগিয়ে নিয়ে যায় মানব কল্যাণের স্বার্থে।
লেখকঃ ডাঃ রাজা সেখ (ডাঃ মুহাম্মদ রাযা কাদেরী)
Dr. Raja Sk (Dr. Muhammad Raza Qadri)