থায়রয়েড বিপত্তি – কি খাব, কি খাবনা !
থাইরয়েডের সমস্যা কারও কাছেই এখন অজানা নয়। বর্তমানে বেশির ভাগ বাড়িতেই কোনও না কোনও মানুষ থায়রয়েডের সমস্যায় ভোগেন। যার পরিণতি স্বরূপ দেখা দেয় গুরুতর সব অসুখ। সন্তান ধারণের ক্ষেত্রেও বড় ধরনের বিপত্তি হয়ে দাঁডা়য় থাইরয়েড।থায়রয়েড হরমোনের তারতম্যজনিত সমস্যা দুই রকম হতে পারে। যেমন- শরীরে থায়রয়েড হরমোনের পরিমাণ কমে গেলে বা হাইপোথায়রয়েডিজম,আবার বেড়ে গেলে হাইপারথায়রয়েডিজম। হাইপোথায়রয়েডিজমের রোগের সংখ্যা হাইপারথায়রয়েডিজমের চেয়ে অনেক বেশি। আমাদের দেশে সেটি আরও প্রকট। বাংলাদেশের আয়োডিন ঘাটতিজনিত ব্যাপক জনগোষ্ঠী এ সমস্যায় আক্রান্ত। এই সমস্যায় পুরুষের চেয়ে ৫০ গুন বেশি ভোগেন নারীরা। হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়া বা অনেক চেষ্টা করেও ওজন কমাতে না পারার একটি অন্যতম কারন কিন্তু হতে পারে হাইপোথায়রয়েডিজম। যার সহজ অর্থ দেহে থাইরয়েডের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়া। আর থায়রয়েড হরমোনের পরিমান কমে গেলে দেহে মেটাবলিক সিস্টেমের গরমিল দেখা দেয়। যার ফলে ওজন বৃদ্ধি পায়।
থাইরয়েড সমস্যা থাকলে ডায়েটে যেসব খবার গুলো খাবেন-
থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতা বাড়াতে শরীরে জিঙ্ক,আয়োডিন,অ্যালগি,কপার ও আয়রন জাতীয় পুষ্টি উপাদানগুলোর মাত্রা বেশি হওয়া প্রয়োজন।
কপার এবং আয়রন দুটোই থাইরডের মোকাবিলা করতে জরুরি। টাটকা মাংস, ওয়েস্টার, কাজু, গমের আটা, কোকোতে প্রচুর পরিমাণে কপার রয়েছে। সবুজ শাকসবজি, বিন, আঁশওয়ালা মাছ, সামুদ্রিক মাছ, পোলট্রির ডিমে রয়েছে আয়রন। সেই সঙ্গেই ভিটামিন সি ব্যালান্স করতে লেবু, টমেটো, ক্যাপসিকাম খান। আগে নারকেল বা নারকেলের দুধ থায়রয়েডের আদর্শ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। তবে থায়রয়েড নিয়ন্ত্রনে রাখতে স্ট্রেস কমানোর প্রয়োজন রয়েছে। তাই থায়রয়েড কমাতে মাথা ঠান্ডা রাখা জরুরি। থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের কাজ সঠিক ভাবে পরিচালনা করতে প্রয়োজন যথাযথ পুষ্টি গ্রহণ, সেই সাথে ওজন নিয়ন্ত্রণ করাও জরুরি। থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে কোন খাবার গুলো আপনাকে উপকার দেবে আর কী কী করলে আপনি উপকার পাবেন, সে সব সম্পর্কে আসুন জেনে নেয়া যাক:
১। আয়োডিন যুক্ত খাদ্য গ্রহণ:
যদিও আয়োডিন যুক্ত লবণের মাধ্যমে আমরা আয়োডিন গ্রহণ করে থাকি। তবে লবণ কম পরিমাণে খাওয়াটাই ভালো। কলা, গাজর, স্ট্রবেরি, দুধ, সামুদ্রিক মাছ এবং দানাশস্যে আয়োডিন রয়েছে।এগেুলোকে প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখুন যা আপনার আয়োডিনের ঘাটতি পুরনে সাহায্য করবে।। শাকপাতা ও মৌসুমি সবজিতেও রয়েছে আয়োডিন। তাই খাবার তালিকা থেকে এগুলো বাদ দিলে চলবে না।
২। প্রোটিন যুক্ত খাদ্য গ্রহণ:
থাইরয়েড ম্যানেজমেন্টের জন্য প্রোটিন খুবই জরুরি। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার রাখবেন। চিজ, পনির, ডিম, ফ্রেশ সি ফুড, মুরগির মাংস পরিমিত খেলে থাইরয়েড গ্ল্যান্ড ঠিক মত কাজ করতে পারবে।
৩। জাঙ্কফুড থেকে দূরে থাকুন:
বার্গার, হটডগ, চিপস প্রভৃতি জাঙ্কফুড থেকে দূরে থাকুন। এ সব প্রসেসড খাবারের বাড়তি লবণ কোষের সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়। আর এগুলো শরীরে মেদ জমতে সহায়তা করে। তাই যথাসম্ভব এই খাবারগুলো এড়িয়ে চলবেন। বাড়িতে তৈরি ওয়েল ব্যালেন্সড খাবার খান।
৪। নিয়মিত ব্যায়াম করুন:
থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে প্রপার ডায়েটের সাথে সাথে প্রতিদিন নিয়ম করে ব্যায়াম করা জরুরি। সাইক্লিং কিংবা সুইমিং থাইরয়েডের জন্য খুব উপকারী। যোগাসনও খুব কাজে দেয় বলে জানিয়েছেন অনেকে।
৫। পরিমিত ঘুম:
থাইরয়েড ভালো ভাবে কাজ করার জন্য প্রয়োজন রাতের ভালো ঘুম খুব জরুরি। অনেকে রাতে জেগে থেকে দিনে ঘুমান। এটা ঠিক আছে যদি আপনার ঘুম পরিমিত হয়। তবে মনে রাখবেন রাতের ঘুম বেশি গাঢ় হয়। কারণ শব্দ ও আলোর উৎপাত রাতে কম থাকে।যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন-বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রকোলি, ছোলা জাতীয় খবার থাইরয়েড বাড়ায়। এ ছাড়াও সর্ষে, মুলো, রাঙা আলু, চিনে বাদাম এড়িয়ে চলাই ভাল। থাইরয়েড বেড়ে গেলে দুধ ও দুগ্ধজাত খাবার যেমন পনির, চিজ ডায়েট থেকে বাদ দিন। চিনি, রান্না করা গাজর, পাকা কলা, শুকনো ফল, মধু, ময়দার রুটি, সাদা ভাত, আলু, মিষ্টি শরীরে কার্বহাইড্রেটের মাত্রা বাড়ায়। থায়রয়েড থাকলে এগুলোও কম খান। চা, কফি, চকোলেট, সফট ড্রিঙ্ক যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন।
[বি.দ্র অনেকেরই থাইরয়েড সমস্যার পাশাপাশি অন্যান্য সমস্যাও থাকতে পারে সেক্ষেত্রে খাদ্য তালিকার ধরনে কিছুটা পরিবর্তন আনতে চাইলে সরাসরি পুষ্টিবিদের পরামর্শ গ্রহণ করা ভালো]
পুষ্টিবিদ সাজেদা কাশেমএক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টরবাংলাদেশ একাডেমী অব ডায়েটেটিক্স এন্ড নিউট্রিশন (বি এ ডি এন)